ইউরোপে এয়ারলাইনের কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে

-মনিটর ডেস্ক রিপোর্ট Date: 29 April, 2025
ইউরোপে এয়ারলাইনের কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে

ঢাকাঃ ইউরোপীয় এয়ারলাইন খাতের ব্যস্ত শিডিউল কভিড মহামারী-পূর্ব কার্বন নিঃসরণের স্তরকে অতিক্রম করতে পারে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ বৃদ্ধি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়।

পরিবেশবাদী সংস্থা ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (টিঅ্যান্ডই) পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ইউরোপভিত্তিক এয়ারলাইন প্রতিষ্ঠানগুলোর ফ্লাইট থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ১৯ কোটি ৫২ লাখ টনে পৌঁছতে পারে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি।

গত বছর বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ চলাচল কভিড মহামারীর আগের স্তরের কাছাকাছি ফিরে আসে। ওই সময় ইউরোপীয় এয়ারলাইনগুলো বায়ুমণ্ডলে যোগ করে ১৮ কোটি ৭৬ লাখ টন কার্বন।

২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে ইউরোপীয় এয়ারলাইনগুলো। বিকল্প জ্বালানি, কার্বন ট্রেডিং স্কিম এবং উন্নত ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে এ লক্ষ্যে পৌঁছতে চায় তারা। তবে সংস্থাগুলো বলছে, উড়োজাহাজে বিকল্প জ্বালানি বা সাসটেইনেবল এভিয়েশন ফুয়েল (এসএএফ) ব্যবহার বেশ ব্যয়বহুল ও এর উৎপাদন অপর্যাপ্ত। তাই গত মাসে ইইউকে পরিবেশগত নিয়ম শিথিল করার অনুরোধ জানিয়েছে।

এয়ারলাইন সংস্থার মুখপাত্ররা বলছেন, ইউরোপের উচিত পরিবেশগত নিয়ম বাস্তবায়নের সময়সীমা পিছিয়ে দেয়া। কারণ এসএএফ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। চলতি বছরে ২ শতাংশ এসএএফ সরবরাহ নিশ্চিত হলেও বর্তমান উৎপাদন হারের পরিপ্রেক্ষিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশে উন্নীত করা অসম্ভব। কারণ নতুন জ্বালানিতে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ অত্যন্ত কম। যুক্তরাজ্যের স্বতন্ত্র জ্বালানি নীতি থাকলেও তাদের ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ এসএএফ সরবরাহ নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

ইইউ ও যুক্তরাজ্যের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পদক্ষেপ ‘কঠোর’ উল্লেখ করে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার দাবি জানিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো। তবে ইইউ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘উড়োজাহাজ চলাচলের বৃদ্ধি জলবায়ু প্রতিশ্রুতি অর্জনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এজন্য এয়ারলাইনগুলোকে আরো ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ইউরোপীয় এয়ারলাইন সংস্থাগুলো ইউরোপীয় ব্লকের মোট গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের প্রায় ৪ শতাংশের জন্য দায়ী। টিঅ্যান্ডই বলছে, গত বছর ফ্লাইটের সংখ্যা কভিডের আগের স্তরের চেয়ে বেশি ছিল। ইউরো কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইউরোপীয় দেশগুলোয় ২০১৯ সালের তুলনায় বেশি ফ্লাইট চলাচল করছে। তাদের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ইউরোপের মোট ফ্লাইটের সংখ্যা ২০১৯ সালের স্তর অতিক্রম করবে।

এদিকে কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত ইমিশনস ট্রেডিং স্কিম (ইটিএস) আরো কঠোর করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যা শুধু ইউরোপের কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযোজ্য। তারা বলছে, সামনে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ চলাচলের জন্যও ইটিএসের পরিধি সম্প্রসারিত হতে পারে। এ উদ্যোগ নেয়া হলে ইউরোপ থেকে অন্যান্য গন্তব্যের ফ্লাইটও কার্বন নিয়ন্ত্রণের নীতির আওতায় আসবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে।

টিঅ্যান্ডইয়ের এভিয়েশন পলিসি ম্যানেজার ক্রিস্টিনা হেনকজ বলেছেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইটিএস পর্যালোচনার উদ্যোগ ত্রুটি সংশোধনের বড় সুযোগ। এর মাধ্যমে ব্লকের বাইরের এয়ারলাইনসগুলোর নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, যাতে এভিয়েশন খাত নিজেদের দূষণের প্রকৃত দায় বহন করতে পারে।’

তবে ইউরোপীয় উড়োজাহাজ চলাচল শিল্পের বাণিজ্য সংগঠন এয়ারলাইনস ফর ইউরোপ বলেছে, ‘ব্লকের এয়ারলাইনগুলো উড়োজাহাজ চলাচলকে কার্বন নিঃসরণমুক্ত করার পথে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে শুধু ইউরোপীয় সংস্থার ওপর আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ বৈশ্বিক উড়োজাহাজের মোট নিঃসরণ কমাতে তেমন বড় ভূমিকা রাখবে না।’

-B

Share this post



Also on Bangladesh Monitor