ঢাকাঃ কেউ বলেন ভূস্বর্গ। কেউ বলেন উপমহাদেশের সুইজারল্যান্ড। যারা বেড়াতে ভালোবাসেন, কাশ্মীর তাদের কাছে প্রকৃত অর্থেই স্বর্গরাজ্য।
বহুবছর ধরে চলে আসা রাজনৈতিক টানাপোড়েন, উগ্রবাদী হামলার ক্ষত সারিয়ে, কোভিডের প্রকোপ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প। মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) জঙ্গিহানায় কাশ্মীরের অর্থনীতির চালিকাশক্তি সেই পর্যটন শিল্পই ফের প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
আতঙ্কে বাতিল হচ্ছে বুকিং
পহেলগামের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উৎকণ্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়। যে পর্যটকরা সেখানে ছিলেন তারা ফিরে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন।
শ্রীনগরের হস্তশিল্প ব্যাবসায়ী ফিরোজ আহমেদ শেখের দোকানও পর্যটক-নির্ভর। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, "যে হোটেল এবং পর্যটন সংস্থার সঙ্গে আমি কাজ করি তারা জানাচ্ছে ক্রমাগত বুকিং বাতিল হচ্ছে। ট্যুর কোম্পানিগুলি বুকিং-এর টাকা ফেরত নিয়ে নিচ্ছে। আগামী মে মাসও আমাদের জন্যও সুসময় হওয়ার কথা ছিল। এখন সবই বিশ বাঁও জলে।"
মুম্বাইয়ের ভিপি ট্রাভেলসের কর্ণধার জিতুল মেহতা জানান, এই মুহূর্তে তাদের কাশ্মীরের সব বুকিং স্থগিত রাখা আছে। আমার ক্লায়েন্টরা জানিয়েছেন তারা ১০ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করে কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।" মে-জুন মাসে তার কাছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জনের কাশ্মীর যাত্রার বুকিং ছিল।
কলকাতার এআরইএস ট্রাভেলের কর্ণধার অনিল পাঞ্জাবি জানান, তাদের কাশ্মীরের যা বুকিং ছিল তার অধিকাংশই বাতিল করতে চান পর্যটকরা। তিনি বলেন, "মোট বুকিং-এর ৭০ শতাংশ ক্যানসেল হয়েছে। আমার ধারনা বাকি ৩০ শতাংশ ক্যানসেল হয়ে যাবে। কাশ্মীর এই মুহূর্তের খুব জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। এই ধাক্কা সামলানো কঠিন হবে।"
সিটি ট্রাভেলসের বিলোলাক্ষ দাস জানান, তারা দলবদ্ধ বুকিং নেন। ছয় জন থেকে ১৫ জনের দল হয়। মে মাসে প্রায় পাঁচ-ছয়টি দলের বুকিং ছিল। এক এক করে বাতিল হচ্ছে প্রায় সবকটাই।"
প্রশ্নের মুখে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটন শিল্প থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এর উপর নির্ভরশীল প্রায়ও আড়াই লক্ষ মানুষ। কোভিডের কারণে ২০২০-২০২১সালে মার খেলেও, ২০২২ থেকে ঘুরে দাঁড়ায় কাশ্মীরের পর্যটন। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে প্রায় ২৭ থেকে ২৮ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে কাশ্মীরে। গরমের ছুটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মীরে হোটেল, হোমস্টে প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। এরকম অবস্থায় পর্যটকদের উপর জঙ্গিহানায় প্রমাদ গুনছেন সেখানকার ব্যাবসায়ী সম্প্রদায়।
-B