ঢাকাঃ শুল্ক বৃদ্ধির আতঙ্ক আর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রাইভেট জেটের চাহিদা কমে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বার্কলেসের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, মার্চের তুলনায় বর্তমানে প্রাইভেট জেট কেনার প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ ৪৯ শতাংশ কমে গেছে। কভিড-১৯ মহামারীর পর এটি সবচেয়ে বড় পতন।
৯-১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালিত জরিপে ৬৫ জন বিজনেস জেট ব্রোকার ও অর্থায়নকারী অংশ নেন। বার্কলেসের বিজনেস জেট সূচক অনুযায়ী, বাজারের অবস্থা মূল্যায়নের জন্য পাঁচটি বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়।
জরিপে দেখা যায়, মার্চের মাঝামাঝিতে সূচক স্কোর ছিল ৫২, যা এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কমে ৪০-এ নেমে আসে। সূচক ৪০-এ নামার মানে হলো বাজার ধীরে ধীরে মন্দার দিকে যাচ্ছে।
জরিপে দেখা গেছে, কেবল মজুদের পরিমাণ (ইনভেন্টরি লেভেল) কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে অন্য সব সূচকেই অবনতি হয়েছে।
বার্কলেসের বিশ্লেষক ডেভিড স্ট্রাউস বলেন, ‘চাহিদা কমার কিছুটা শঙ্কা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এত বড় মাত্রায় পতন হবে তা ধারণা করা হয়নি।’
অনেক গ্রাহক প্রাইভেট জেট কেনার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করেছেন। তারা শুল্কের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ শুধু উড়োজাহাজের দামই নয়, তাদের নিজস্ব ব্যবসার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
জরিপে অংশ নেয়া ৪৬ শতাংশ বলেছেন, মার্চের পর থেকে গ্রাহকের আগ্রহ কমেছে। ৪৪ শতাংশ বলেছেন, আগ্রহ অপরিবর্তিত আছে। মাত্র ১০ শতাংশ বলেছেন, আগ্রহ বেড়েছে।
নতুন জেটের চাহিদার ওপর শুল্কের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ৯৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বেশির ভাগ মনে করেন, প্রভাবটি হবে উল্লেখযোগ্য। ব্যবহৃত (ইউজেড) উড়োজাহাজের বাজারও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা ব্যবহৃত উড়োজাহাজের চাহিদা কমবে বলে মনে করছেন। তবে ২৭ শতাংশ বলছেন, ব্যবহৃত উড়োজাহাজের চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে।
বার্কলেসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রাইভেট জেটের বাজারের অবস্থা উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানিগুলোর অর্ডার-বিল অনুপাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সূচক স্কোর ৪০ মানে হলো নতুন অর্ডারের আর্থিক পরিমাণ এখনকার ডেলিভারির তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম।
তবে মার্কিন কংগ্রেসের সাম্প্রতিক বাজেট উদ্যোগ ব্যক্তিগত জেট বাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ একটি বাজেট প্রস্তাব পাস করেছে, যাতে ট্যাক্স কাটস অ্যান্ড জবস অ্যাক্টের (টিসিজেএ) সুবিধা পুনরায় বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এ আইনের আওতায় আগে ব্যবসায়িক সরঞ্জাম কেনার সম্পূর্ণ অর্থ একবারে করছাড়ের আওতায় আনা যেত। ২০২৩ সাল থেকে এ সুবিধা ধাপে ধাপে কমে যাচ্ছে, যা ২০২৭ সালে পুরোপুরি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা হারটি আবার ১০০ শতাংশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন এবং এটি আগের সময়ের জন্যও প্রযোজ্য করতে চাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্চে এ উদ্যোগের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। সুবিধাটি ফিরিয়ে আনা গেলে কর ছাড়ের কারণে প্রাইভেট জেট কেনা অনেক বেশি লাভজনক হয়ে উঠবে ও বাজারে আবার চাহিদা বাড়তে পারে। তবে আপাতত শুল্কের অনিশ্চয়তা ও দুর্বল অর্থনৈতিক আস্থার কারণে প্রাইভেট জেটের বাজার ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
-B