সিলেটের গোপন সৌন্দর্যের সন্ধানে

প্রাকৃতিক রহস্যে ঘেরা হারং হুরং

মনিটর অনলাইন Date: 06 May, 2025
সিলেটের গোপন সৌন্দর্যের সন্ধানে

সিলেটঃ সিলেটের সবুজ পাহাড় আর রহস্যময় গুহার ভাণ্ডারে নতুন করে যোগ হয়েছে এক আকর্ষণীয় নাম—হারং হুরং। স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষায় যার অর্থ "গুহার গর্ত", এই স্থানটি ক্রমেই হয়ে উঠছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এক নতুন গন্তব্য।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হারং হুরং মূলত একটি প্রাকৃতিক গুহা। গুহাটির প্রবেশ মুখ বেশ সরু হলেও ভিতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়ে বিস্ময়কর দৃশ্য। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে চুনাপাথরের দেয়াল, কখনো সুড়ঙ্গাকৃতি, কখনো গম্বুজের মতো। ভিতরে হাঁটার সময় অনুভব হয় এক অন্য জগতের রোমাঞ্চ।

সুড়ঙ্গটি প্রায় সাতশো বছরের পুরনো। স্থানীয়দের মধ্যে এই গুহা নিয়ে নানা ধরণের লোক এবং পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে।  একসময়  তিনজন ভারতীয় তান্ত্রিক এখানে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের মধ্যে কেবল একজন ফিরে এসেছিলেন এবং খুব অল্প সময়ের জন্য বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অস্বাভাবিক ছিলেন। সিলেটের এক ধনী ব্যবসায়ী এটি খননের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি একটি অস্বাভাবিক স্বপ্ন দেখার মাঝখানে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ ধরণের বহু মিথ প্রচলিত রয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও গাইড আব্দুল হামিদ জানান, “আমরা ছোটবেলা থেকেই এই গুহার কথা শুনতাম, তবে এখন পর্যটকেরা যেভাবে আসছেন, আগে তা ভাবতেই পারিনি।”

গুহার আশেপাশের পরিবেশও চমৎকার। পাহাড়ি ঝরনা, বুনো ফুল আর পাখির কিচিরমিচিরে প্রকৃতির এক অপার শান্তি মেলে এখানে। বিশেষ করে ভোরবেলা কিংবা গোধূলি লগ্নে হারং হুরং হয়ে ওঠে ছবির মতো সুন্দর।

তবে, গুহাটি ঘুরে দেখতে গেলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। ভিতরে আলো কম, তাই টর্চ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। স্লিপার নয়, পরতে হবে ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে।

কিভাবে যাবেন:

সিলেট শহর থেকে গোয়াইনঘাট হয়ে হারং হুরং-এ পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা। সিএনজি বা মাইক্রোবাসে সহজেই যাওয়া যায়। রাস্তাটি কিছুটা পাহাড়ি, তাই অভিজ্ঞ চালক রাখা বাঞ্ছনীয়।

থাকা-খাওয়া:

হারং হুরং এলাকায় এখনো তেমন আধুনিক হোটেল-রিসোর্ট গড়ে ওঠেনি। তবে আশেপাশের বাজার ও গ্রাম্য হোমস্টে-তে অল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নিজের খাবার সঙ্গে নেওয়া ভালো, যদিও স্থানীয় দোকানে মৌসুমি ফল ও হালকা নাস্তা পাওয়া যায়।

হারং হুরং শুধু একটি গুহা নয়, এটি প্রকৃতির এক জীবন্ত বিস্ময়। যারা ভ্রমণপিপাসু এবং চিরন্তন রোমাঞ্চের খোঁজে থাকেন, তাদের জন্য হারং হুরং হতে পারে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

-N

Share this post



Also on Bangladesh Monitor