কক্সবাজার: টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের অন্যতম পর্যটন খাত সেন্টমার্টিনে ভরা মৌসুমেও পর্যটকে ভাটা পড়েছে। এতে পর্যটনখাত হুমকিতে বলে জানিয়েছেন দ্বীপটির একাধিক ব্যবসায়ী।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলাচল করা ট্রলার ও স্পিড বোট লক্ষ্য করে মিয়ানমারের থেকে বারবার গুলি ছুঁড়া হচ্ছে। এ কারণে এই নৌ-রুটে তিনদিন ধরে সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সেন্টমার্টিনের একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা নৌপথ হওয়ায় সেন্টমার্টিনের সঙ্গে এখন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রবিবার (৯ জুন)বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, তিন দিন ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্পিড-বোট চলাচলও বন্ধ। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো সংকট হয়নি। যাতায়াত নিয়ে সমস্যা হচ্ছে অনেক। অনেকেই সেন্টমার্টিনে আসতে পারছে না। আবার সেন্টমার্টিন থেকে যেতেও পারছে না। কিছুটা খাবার নিয়ে কষ্টে আছে। তবে এখনো খাবার সংকট তৈরি হয়নি। সংকট হতে পারে সবজি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের। আর কয়েকদিন বন্ধ থাকলে খাবার সংকটও তৈরি হতে পারে।
সেন্টমার্টিন বিচ ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন শুভ বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপের একজন ভ্যানগাড়ি চালক আগে দৈনিক ২ হাজার টাকা আয় করতে পারতেন। অথচ এখন তার হাতখরচের টাকা তুলতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবকটি জাহাজ চলাচল করলে ভরা মৌসুমের ছুটির দিনে দ্বীপে ৭ থেকে ৮ হাজার পর্যটক আসতে পারে। ফলে পর্যটন ব্যবসায় ভালো হয়। কিন্তু এখন মাত্র ৩টি জাহাজে এক থেকে দেড় হাজার পর্যটক আসছে। এতে সবক্ষেত্রে লোকসান গুনতে হচ্ছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টে ১০-১৫ জন স্টাফের বেতনের টাকাও তুলতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘টেকনাফ থেকে জাহাজ এলে সেন্টমার্টিনে যারা ঘরোয়া পরিবেশে আবাসিক ও রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা করেছে, তাদের মোটামুটি একটা আয় থাকে। কিন্তু কক্সবাজার থেকে জাহাজ আসাতে দ্বীপের বেশির ভাগ হোটেল প্রায় অচল।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের চলাচলকারী বোট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, তিনদিন ধরে বোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমার বোটেও গুলি করা হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এর আগের দিনও গুলি করেছে আরেকটি ট্রলারে। লোকজন পারাপার হতে পারছে না। সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে খাদ্য, মালামাল এবং মানুষ পারাপারের জন্য ৩টা ট্রলার আসে এবং ৩টা চলে যায়। আর অন্যান্য মালামাল আনা-নেয়ার জন্য কিছু ট্রলার চলাচল করে। গতকালও দুইটা ট্রলার যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো, তবে টেকনাফ মোহনায় গুলি করলে আবারো সেন্টমার্টিনে ফেরত আসে ট্রলারগুলো।
এদিকে গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে নাফ নদীর মোহনায় সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমার থেকে গুলি চালানো হয়।
এর আগেও ট্রলার লক্ষ্য করে বারবার গুলি ছুঁড়ে মিয়ানমারের ওপার থেকে। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার কারণে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ট্রলার এবং স্পিড-বোট চলাচল বন্ধ রেখেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইয়ামিন হোসেন বলেন, সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা-নেওয়া এপার থেকে করতে হয়। যেহেতু মিয়ানমার থেকে বারবার গুলি করা হচ্ছে একারণে আমরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার বিকল্প নিয়ে ভাবছি। নাফ নদীর মোহনায় যেহেতু এ ঘটনা ঘটছে তাই নাফকে এভয়েড করে আমরা বিকল্প কিভাবে তাদের খাদ্যসামগ্রী এবং যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায় এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।
গুলি কারা করছে সেটি বুঝা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, গুলি ছুঁড়া হচ্ছে। কিন্তু কারা গুলি করছে আমরা বুঝতে পারছি না। যেহেতু ওপারে যুদ্ধ চলছে। আমরা এসব বিষয় নিয়ে সরকারকে জানিয়েছি। স্থানীয়ভাবেও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
-B