বহুতল ভবনের রুফটপ, করপোরেট হেলিপ্যাড, আবাসিক হোটেল, হাসপাতালের ছাদে, প্রাইভেট সেক্টরের ভূমিতে হেলিপোর্ট নির্মাণের সুযোগ দিতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এজন্য ‘হেলিপোর্ট ও এলিভেটেড হেলিপোর্ট স্থাপন ও পরিচালনা বিধিমালা-২০২৩’ করা হয়েছে। তবে যে কেউ ইচ্ছে করলেই ভবনে বা প্রতিষ্ঠানের মাঠে হেলিকপ্টার নামাতে পারবেন না।
হেলিকপ্টার নামাতে ছাদে বা মাঠে হেলিপ্যাড নির্মাণের আগে অন্তত অর্ধশতাধিক শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা ভবনমালিককে; নিতে হবে ফায়ার সার্ভিস ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এনওসি (অনাপত্তিপত্র)। এ বিষয়ে করা হয়েছে একটি নীতিমালা; যা ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ১২ জুন হেলিকপ্টার অবতরণের নীতিমালাটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে সরকার।
বিধিমালা অনুযায়ী ঋণখেলাপি ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতরা হেলিপোর্ট নির্মাণের অনুমতি পাবেন না। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রোগী পরিবহন, হেলিপোর্ট ও হেলিকপ্টার মালিকের করপোরেট কাজে নির্দিষ্ট আকাশসীমা ব্যবহার করা যাবে। এর বাইরে ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হেলিপোর্ট ব্যবহার করা যাবে। হেলিপোর্ট নির্মাণ বিধিমালায় এসব কথা বলা হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী হেলিপোর্ট স্থাপনের জন্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ করা কাগজ সরবরাহ করে প্রথমে বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। এর মধ্যে আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, কোনো প্রতিষ্ঠান হেলিপোর্ট স্থাপন করতে চাইলে তাকে বাংলাদেশে নিবন্ধিত আবেদনকারী ঋণখেলাপি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হতে পারবে না; হেলিপোর্টে পরিকল্পিত পরিমাপের হেলিপ্যাড, হেলিকপ্টার পার্কিং, ট্যাক্সিওয়ে, হেলিপ্যাডের চতুর্দিকে অত্যাবশ্যকীয় নিরাপদ ও প্রতিবন্ধকতামুক্ত এলাকা, টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ জমি আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকতে হবে। অথবা জমি ব্যবহারের চুক্তিপত্র বা প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে।
আবেদনপত্রে হেলিপোর্ট স্থাপনের জন্য অর্থ সংকুলানের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে আয়কর প্রদানের হালনাগাদ সনদ। এ ছাড়া হেলিপোর্টে নির্মিতব্য অবকাঠামো সরকারের প্রচলিত ইমারত নির্মাণ বিধি-বিধান অনুসরণ করে নির্মাণ করতে হবে। বিদ্যমান কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণপূর্বক হেলিপোর্ট নির্মাণ করতে হবে। হেলিপোর্ট স্থাপনের জন্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকতে হবে এবং জনস্বার্থে ও জরুরি প্রয়োজনে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে হেলিপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ প্রদানের অঙ্গীকারনামা আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
এ ছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র, জননিরাপত্তা বিভাগের অনাপত্তিপত্র, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অনাপত্তিপত্র; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র; সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, যেমন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের অনাপত্তিপত্র; প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) অনাপত্তিপত্র; জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) অনাপত্তিপত্র; আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিক না হলে উক্ত ভূমির মালিক কর্তৃক প্রদত্ত অনাপত্তিপত্র এবং কেপিআই নীতিমালার বিধান অনুসারে অনাপত্তিপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে দিতে হবে। এর পর যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দেওয়া হবে অথবা দেওয়া হবে না। এ ছাড়া হেলিপোর্ট নির্মাণের পর তা ব্যবহারের জন্যও লাইসেন্স নিতে হবে। এলিভেটেড হেলিপোর্ট পরিচালনা বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এলিভেটেড হেলিপোর্ট অপারেটর কোনো এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেটধারীর (হেলিকপ্টার) সঙ্গে চুক্তি করতে পারবেন। সরকারি গেজেট প্রকাশের ২১ দিন পর থেকে কার্যকর হবে এই বিধিমালা।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার অবতরণের অনুমতি দেওয়া বন্ধ ছিল। এর কারণ হিসেবে বেবিচক জানিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন অনুমতি দিতে মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছিল। এর কারণ হিসেবে তারা নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং মাদকপাচারের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছিল। তাই এতদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরণ করত। তবে মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই অনুমতির দাবি করে আসছিল।
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) তথ্যমতে দেশে ১০টি বেসরকারি কোম্পানির ৩২টি হেলিকপ্টার আছে। কোম্পানিগুলো হলো সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স, স্কোয়ার এয়ার লিমিটেড, আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন লিমিটেড, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স লিমিটেড, মেঘনা এভিয়েশন লিমিটেড, বিআরবি এভিয়েশন লিমিটেড, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ লিমিটেড, বিসিএল এভিয়েশন লিমিটেড, ইমপ্রেস এভিয়েশন লিমিটেড, বেক্সিমকো এভিয়েশন লিমিটেড।
-B