ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো শাখায় প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে দেশের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীর পণ্য পুড়ে ছাই হয়েছে।
এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের পণ্যও রয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কবির আহমেদ জানিয়েছেন, কার্গো ভিলেজে এই আগুনে আনুমানিক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ১৩ পয়সা হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১২ হাজার ২১৪ কোটি টাকা।
অপরদিকে, ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেড নামের একটি কুরিয়ার কোম্পানির পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, সকালেই তার কোম্পানির আড়াই টন মালামাল নেমেছে কার্গো শাখায়। শনিবার অর্ধদিবস কার্যক্রম চলায় কোনো মালামালই তিনি বের করতে পারেননি। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল বলেন, এই ঘটনায় অসংখ্য আমদানিকারকের পণ্য পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরই জানা যাবে কার কত টাকার পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমা দাবির প্রক্রিয়া শুরু করতে সময় লাগবে।
বাণিজ্য খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এই অগ্নিকাণ্ডে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে এবং রপ্তানি পণ্যের লিড টাইমে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করবে।
এদিকে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমদানি পণ্য রাখতে বিকল্প ওয়্যার হাউসের ব্যবস্থা করা হবে।’
আগুন লাগার পরপরই উড়োজাহাজ চলাচল স্থগিত করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরে প্রায় ৭ ঘণ্টা উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বিমানবন্দরের টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
আগুন নেভাতে রোবট
আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় ফায়ার ফাইটারদের কাজ করতে সমস্যা হয়। কয়েকজন ফায়ার ফাইটার আহতও হন। এরপর আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয় ‘রিমোট কন্ট্রোল ফায়ারফাইটিং রোবট’। এ রোবট মানুষের সাহায্য ছাড়াই খুব কাছ থেকে আগুনে পানি নিক্ষেপ করে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ২ কমিটি
কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ৭সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এই কমিটিকে দ্রুততম সময়ে অগ্নিকাণ্ডের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।