রাঙ্গাবালীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিদেশি পর্যটক

-মনিটর রিপোর্ট Date: 07 October, 2025
রাঙ্গাবালীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিদেশি পর্যটক

 

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী—প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যে ঘেরা এক অপরিচিত স্বর্গ। চারদিক জুড়ে নীল জলরাশি, সবুজ বনাঞ্চল, খোলা আকাশে রোদের ঝলকানি আর নোনাজলের মৃদু গন্ধে গড়ে উঠেছে এক মায়াবী পরিবেশ, যা পর্যটকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

‘সাগরকন্যা’ নামে পরিচিত পটুয়াখালীর এই অংশে রয়েছে চারটি নয়নাভিরাম সৈকত—সোনারচর, হেয়ার আইল্যান্ড, জাহাজমারা ও তুফানিয়া। প্রতিটি সৈকতের রয়েছে নিজস্ব বৈচিত্র্য, আর এক সফরেই এই চারটির সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগ এনে দিচ্ছে এক অভিনব অভিজ্ঞতা।

রাঙ্গাবালীর বিশাল বালুকাবেলা, অতিথি পাখির কলকাকলি, ম্যানগ্রোভের সবুজ ছায়া, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের রঙিন দৃশ্য—এসব মিলিয়ে রাঙ্গাবালী হয়ে উঠছে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক নতুন আকর্ষণীয় গন্তব্য।

একসময় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর সমুদ্রসৈকত ছিল কেবল স্থানীয়দের অবসর কাটানোর জায়গা। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলেছে। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিনই এখানে ভিড় করছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ড্রোনে ধারণ করছেন প্রকৃতির অনিন্দ্য রূপ, কেউ বা ঢেউয়ের সঙ্গে মেতে উঠছেন খেলায়।

পর্যটক ও অভিনেতা সাদ্দাম মাল জানান, "রাঙ্গাবালী বাংলাদেশের পর্যটনের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার নাম। চারটি সৈকতের চার রকম সৌন্দর্য আছে। এখানে এসে প্রকৃতির এমন আবেশে ডুবে যাই যে মন থেকে যেতে চায় না। বারবার ফিরে আসার ইচ্ছা জাগে।"

দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি এখন রাঙ্গাবালীর মায়ায় পড়েছেন বিদেশিরাও। সম্প্রতি হাঙ্গেরির টমাস, চেক রিপাবলিকের রাদেক, মাল্টার ড্যারেন, সুইজারল্যান্ডের তাছিয়ানা ও জার্মানির হেনড্রিকসহ আরও অনেক বিদেশি ঘুরে গেছেন এই দ্বীপে।

সুইজারল্যান্ডের পর্যটক তাছিয়ানা বলেন, “বিশ্বের বহু সমুদ্রসৈকত দেখেছি, তবে রাঙ্গাবালীর শান্ত ও নির্জন পরিবেশে এসে যেন এক অচেনা স্বর্গের খোঁজ পেলাম। এখানকার মানুষ অত্যন্ত আন্তরিক। সূর্যোদয়ের সময় সৈকতের ধারে দাঁড়িয়ে ঢেউয়ের শব্দে মন ভরে ওঠে। আমি চাই, বিশ্বের মানুষ এই জায়গাটিকে জানুক, দেখুক।”

বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও স্থানীয় গাইড হিসেবে কাজ করছেন তরুণ শাওন আহমেদ। ইংরেজি ভাষা শিখেছেন ইউটিউব দেখে, এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরছেন রাঙ্গাবালীর অপরূপ সৌন্দর্য। কখনো তিনি বিদেশিদের গানের আসরে নিয়ে যান, কখনো বা শেখান বাংলা ভাষা। পর্যটকদের চোখে এখন তিনি রাঙ্গাবালীর 'অনানুষ্ঠানিক দূত'।

শাওন বলেন, "যারা একবার রাঙ্গাবালীতে আসেন, তারা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা গেলে এখানেই গড়ে উঠতে পারে দেশের পরবর্তী বড় পর্যটন কেন্দ্র।"

এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরাও। সোনারচর-হেয়ার আইল্যান্ড ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক আইয়ুব খান বলেন, "রাঙ্গাবালী এখনো অনেকের কাছে অজানা এক স্বর্গভূমি। 

এখানে সূর্য, সমুদ্র আর অতিথিপরায়ণ মানুষের মিলনস্থল। সরকার যদি এটিকে পর্যটন জোন ঘোষণা করে, তবে এখান থেকে যেমন রাজস্ব আয় হবে, তেমনি কর্মসংস্থান বাড়বে স্থানীয়দের জন্য।"

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব দাশ পুরকায়স্থ জানান, “সারা বছর ধরেই পর্যটকরা এখানে আসেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তো বটেই, ইদানীং দুই-তিনজন করে বিদেশি পর্যটকও নিয়মিত আসছেন। তাদের নিরাপত্তা ও সুবিধার দিকটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পর্যটনকে টেকসই করতে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও এগিয়ে চলছে।”

-B

Share this post



Also on Bangladesh Monitor