ঢাকাঃ ভারতের ছোট শহরগুলোয়ও পৌঁছে গেছে বৈশ্বিক হোটেল চেইনগুলো। এতে নেতৃত্বের আসনে রয়েছে হিলটন ও ম্যারিয়টের মতো ব্র্যান্ড।
হাই ভ্যালু ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত হলেও তারা মূলত দেশটির মধ্যম পর্যায়ের হোটেলে বিনিয়োগ করছে। কারণ ভারতে পর্যটনের উত্থানে প্রধান ভূমিকা রাখছেন দেশটির মূল্যসংবেদনশীল মধ্যবিত্তরা।
চলতি বছরের শুরুতে মুম্বাইভিত্তিক কনসেপ্ট হসপিটালিটির সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি করে ম্যারিয়ট। এর মাধ্যমে দেশটিতে হোটেল কক্ষ প্রায় ৩০ হাজার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ হাজারে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছে তারা। বর্তমানে নির্মাণাধীন হোটেলসহ ভারতে ৬০টি হোটেল পরিচালনা করছে ম্যারিয়ট, যা আগামী ১০ বছরে ১০ গুণ বাড়াতে চায় তারা।
প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের নতুন মধ্যবিত্তদের মধ্যে সম্পদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নতুন হাইওয়ে ও বিমানবন্দর বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশটিতে ভ্রমণের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে। তবে শিল্প বিশেষজ্ঞ ও করপোরেট কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় ভারতে মানসম্মত আবাসন বাড়ছে না।
বৃহত্তর চীন বাদ দিয়ে ম্যারিয়টের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট রাজীব মেননের মতে, মানুষ এখন অন্যান্য খরচের তুলনায় ভ্রমণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। স্পষ্টভাবে এটি অর্থনীতিতে আবির্ভূত হচ্ছে, যা ভারতের বিভিন্ন স্থানে হোটেল সম্প্রসারণ ও নতুন হোটেল খোলার বড় ধরনের সুযোগ এনে দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালে ভারতে পর্যটন ব্যয় ছিল ৮ হাজার কোটি ডলার। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার কোটি ডলার। ধর্মীয় উৎসব, ছুটি ও বিয়ে উপলক্ষে ভারতীয় মধ্যবিত্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হোটেল অপারেটররা তাড়াহুড়ো করে সেবা বাড়াচ্ছে।
নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুর তুলনায় এখনো ভারতের ছোট শহরগুলোয় পর্যটকের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা নেই। গত জানুয়ারিতে আহমেদাবাদে দুটি কনসার্টে অংশ নেয় ব্রিটিশ ব্যান্ড কোল্ডপ্লে। ওই সময় শহরটিতে হোটেল কক্ষের ভাড়া বেড়েছিল পাঁচ গুণ পর্যন্ত।
হসপিটালিটি অ্যাডভাইজরি গ্রুপ এইচভিএস আনারকের তথ্য অনুসারে, ভারতে প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে ব্র্যান্ডেড হোটেল রুম মাত্র ১৩৮টি। অন্যদিকে চীনে তা দেড় হাজারের বেশি। সে চাহিদা পূরণে টাটার তাজ ও আইটিএসের মতো দেশীয় ব্র্যান্ড এবং বৈশ্বিক চেইনগুলো ভারতের ছোট শহরে শত শত হোটেল নির্মাণ করছে।
মুম্বাইভিত্তিক অ্যামবিট ক্যাপিটালের পরিচালক করণ খান্নার পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৯ সাল নাগাদ ভারতের ব্র্যান্ডেড হোটেল কক্ষ বেড়ে দাঁড়াবে দুই-তিন লাখে। এতে এগিয়ে থাকবে ভারতীয় প্রধান শহরের বাইরের অঞ্চলগুলো। গত বছর নতুন হোটেল চুক্তির অর্ধেকেরও বেশি ছিল মধ্যম পর্যায়ের পরিষেবানির্ভর।
গত বছর ভারতের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে দ্য পার্ক হোটেলস। এ বুটিক হসপিটালিটি গ্রুপ ৩৫টি হোটেল পরিচালনা করছে। আগামী দুই বছরে বর্তমানের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক হোটেল কক্ষ বাড়াতে চায় প্রতিষ্ঠানটির। দ্য পার্ক হোটেলসের সিইও প্রিয়া পাল বলেন, ‘পর্যটকের তুলনায় হোটেল কক্ষ সরবরাহে আমরা পিছিয়ে রয়েছি।’
মধ্যম পর্যায়ের হোটেল নির্মাণের পাশাপাশি হাই ভ্যালু সেবাও বাড়াচ্ছে হিলটন। গত জুনে দিল্লির বিমানবন্দরের কাছে ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া হোটেলের ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। ভবিষ্যতে জয়পুর, গোয়া ও মুম্বাইয়ে আরো বিলাসবহুল হোটেল খুলবে হিলটন।
তবে হোটেল নির্মাণ এ চেইনগুলোর পরিচালন সক্ষমতাকে পরীক্ষায় ফেলবে বলে মনে করেন অনেকে। কারণ ভারতে এখনো মধ্যম পর্যায় ও বাজেট হোটেলের মান অপর্যাপ্ত। ভারতের ভ্রমণকারীরা প্রায়ই হোটেলের অপরিচ্ছন্নতা, খাদ্যের মান ও সেবা নিয়ে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে মুম্বাইভিত্তিক ইনভেস্টেক ক্যাপিটাল সার্ভিসের বিশ্লেষক অনুজ উপাধ্যায় বলেন, ‘অনেক শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। ছোট শহরের ফ্র্যাঞ্চাইজি অপারেটররা প্রায়ই কাজের মান কমিয়ে দেয়, যা ব্র্যান্ডের খ্যাতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।’
-B