পঞ্চগড়ঃ শ্বেতশুভ্র বরফের পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘা। পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পর্বতশৃঙ্গটি নেপাল-সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক পাসপোর্ট ভিসা করে ভারত-নেপালে পাড়ি জমালেও বিনা ভিসায় বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দাঁড়িয়েই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াবী রূপ।
স্থানীয়রা জানান, শরৎকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা এক বিরল ঘটনা। সাধারণত অক্টোবর মাসে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করে এবং তখন সহজে দেখা মেলে দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা। কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের শুরুতেই এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারায় স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, বর্তমানে আবহাওয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন হচ্ছে। গরম ও ঠান্ডা আবহাওয়ার মিশ্রণের কারণে গত দুদিন আকাশ পরিষ্কার ছিলো। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। তবে আগামী সাত দিনের মধ্যে আবারও মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হতে পারে। তবে অক্টোবর থেকে আকাশ তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার থাকে। তখন প্রায় প্রতিদিনই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
মেঘমুক্ত আকাশ পেলেই ছবির মতো ভেসে উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা। হাওয়ায় উড়তে উড়তে মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলে। সুদীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলের মানুষ ভোরের সূর্যোদয়ের সাথে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে উপভোগ করেন কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য। শুধু স্থানীয়রা নয়, কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ হাতছানিতে ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী।
মেঘ আর কুয়াশা মাঝে মাঝে আড়াল করে রাখে তাকে। তখন অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এজন্য অনেকে বলে থাকেন-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য কপালও লাগে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এবার সেপ্টেম্বরের শুরুতেই পরিষ্কার আকাশ পেয়ে উঁকি দিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। স্থানীয়রা তা স্মার্টফোনের ক্যামেরায় ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও দেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তেঁতুলিয়ায় আসতে শুরু করেছে পর্যটকরা।
কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রতি বছর পর্যটকের ঢল নামে। স্থানীয়রা জানান, বর্ষকালের আষাঢ়-শ্রাবণ মেঘের ঢল কাটলেই ভাদ্র তথা সেপ্টেম্বরে মাঝে মাঝে পরিস্কার হয়ে উঠে আকাশ। মেঘের ঘনঘটা কেটে পরিষ্কার আকাশে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য।
স্থানীয়রা জানান, ভারত-নেপালের যুগল পর্বতশৃঙ্গ হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা। পর্বত দুটি আমাদের দেশের না হলেও বাংলাদেশের একমাত্র পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া হতে খুব কাছ হতে পর্বতযুগলের দেখা মিলে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে দেখা যায় এটি।
হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ ও পর্যটন ঘিরে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা। গড়ে উঠেছে পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠান। এতে করে বাড়ছে কাজের ক্ষেত্র। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু জানান, পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া একটি পর্যটন এলাকা। এখানে থেকে খুব কাছ থেকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কেএম আজমিরুজ্জামান জানান, দেশের পর্যটনের অন্যতম অঞ্চল হচ্ছে উত্তরের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। আমরা পর্যটকদের জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি।
পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় উচ্চতম এ পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। সুপেয় পানির ঠিকানাও এই কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি হয়েছে। নদীগুলো বয়ে গেছে পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে।
-B