ঢাকাঃ অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় নজিরবিহীন কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে যুক্তরাজ্য। এরই ধারাবাহীকতায় তিনটি আফ্রিকান দেশের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থায় এক বিশাল পরিবর্তন আসতে চলেছে।
সংবাদমাধ্যম জানায়, সোমবার (১৭ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এই কঠোর ব্যবস্থার ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিক ধাপে যে দেশগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে সেগুলো হলো- অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া এবং ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি)।
যুক্তরাজ্যে এই তিনটি দেশের হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। এই অবৈধভাবে থাকা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অসহযোগিতা করা কিংবা বাধা সৃষ্টি করায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি আরোপের চিন্তা করছে যুক্তরাজ্য। ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছে সেখানকার সরকার।
শুরুটা নরম কূটনৈতিক পদক্ষেপ দিয়ে হলেও, পরে তা সরকারি কর্মকর্তা, পর্যটক এবং ব্যাবসায়িক পরিদর্শকদের জন্য ভিসা স্থগিতাদেশের মতো কঠোর শাস্তিতে পৌঁছাতে পারে।
শাবানা মাহমুদ বলেন, ‘’এখানে আমরা নিয়ম মেনে চলি। আমি আগেই বলেছিলাম যে অপরাধী এবং অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে না নেওয়া দেশগুলির জন্য শাস্তির বিধান রাখা হবে।‘’
বিদেশী সরকারগুলির প্রতি তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘’আপনারা আপনাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিন, নয়তো আমাদের দেশে প্রবেশের সুযোগ হারাবেন।‘’
সংবাদমাধ্যম অনুসারে, এই পদক্ষেপটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম দ্বারা অনুপ্রাণিত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে তার অভিযান পূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর। তিনি মনে করেন, এই অভিবাসন দেশের কাঠামোকে 'ছিঁড়ে ফেলছে'। এই প্রস্তাবটি তার বৃহত্তর পরিকল্পনার একটি প্রধান অংশ।
প্রত্যর্পণের এই আগ্রাসী উদ্যোগ যুক্তরাজ্যের বৃহত্তর অভিবাসন নীতির একটি অংশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিকল্পনার মধ্যে আরও রয়েছে—যে-সব অভিবাসী তাদের অপসারণের বিরুদ্ধে আইনি পথে আপিল করে, তাদের আইনি সুযোগ সীমিত করা এবং মানবাধিকার উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত করা। ছোট নৌকায় অবৈধভাবে প্রবেশকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই পরিবর্তনগুলো অপরিহার্য।
গত বছর যুক্তরাজ্য থেকে ৩৫,০০০-এরও বেশি আইনি অধিকারহীন ব্যক্তি অপসারণ করা হয়েছে এবং নতুন ব্যবস্থাগুলো এই প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করতে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিককালে এক দশকে প্রথমবারের মতো অভিবাসন বিধিতে সবচেয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
নতুন ‘গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ড’ পূর্বের প্রত্যাখ্যানের কারণগুলোকে প্রতিস্থাপন করেছে। সরকার আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, আড়াই বছর পর পর শরণার্থী মর্যাদা পর্যালোচনা করা হবে। অর্থাৎ যাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাদেরও ফেরত যেতে হতে পারে যদি পরিস্থিতি নিরাপদ মনে হয়।
অবিলম্বে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকির সম্মুখীন হওয়া তিনটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আপাতত সম্ভাবনা নেই। ২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদার করতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। হোম অফিস এই সম্পর্ককে প্রকাশ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
চুক্তির লক্ষ্য— নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎকার বাতিল করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে সহজ করা, যাতে ব্যর্থ আশ্রয়প্রার্থী, বিদেশি অপরাধী এবং ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করা ব্যক্তিদের অপসারণ দ্রুত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যে কোনও দেশ অসহযোগিতা করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করতে প্রস্তুত, তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বর্তমানে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর নিবদ্ধ।
-B