কক্সবাজার : দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দিনে জনসমুদ্রের কেন্দ্র হলেও রাতের অন্ধকারে পরিণত হচ্ছে ভীতিকর স্থান হিসেবে।
ঝাউবাগানসহ সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টের বৈদ্যুতিক বাতি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় সন্ধ্যার পর সেখানে প্রতিনিয়ত ছিনতাই, ইভটিজিং ও অন্যান্য অপরাধ হচ্ছে। পর্যটকরা রাতের সৈকতে ভ্রমণে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছেন।
সৈকতের অব্যবস্থাপনাও বড় সমস্যা। দখলকৃত বালিয়াড়িতে গড়ে উঠছে অবৈধ দোকান, অপরিকল্পিত যন্ত্রচালিত যানবাহন ও হকারদের দৌরাত্ম্য, যা পর্যটকদের অসুবিধা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি, লাবণী থেকে ডায়বেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত বছরের পর বছর সমুদ্রের সঙ্গে বিলীন হচ্ছে বালিয়াড়ি।
পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল-মোটেল, ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে পরিবেশবান্ধব পর্যটন উদ্যোগ যেমন ইকো রিসোর্টগুলো আশার আলো দেখাচ্ছে।
২০১৬ সালে পরিকল্পিত তিনটি ট্যুরিজম পার্কের বাস্তবায়ন থমকে আছে। পর্যটন নগরীতে শিশু পার্কও পূর্ণরূপে নেই।
১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের কমবেশি ঢল থাকে সারা বছরই। বিশেষ করে লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট থাকে সবসময় জমজমাট। সমাগম বেশি হয় শীত মৌসুমে।
কিন্তু অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অবহেলায় দিন দিন ম্লান হচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য। পরিকল্পনার অভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না অপার সম্ভাবনা। পর্যটকদের আনন্দ অনেক সময় বিষাদে পরিণত হয়। সাগরে নেমে কেউ ভেসে গেলে বা দুর্ঘটনায় পড়লে উদ্ধারে নেই পর্যাপ্ত লাইফগার্ড, ইক্যুইপমেন্ট, ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স।
লাইফগার্ডের সদস্যরা বলেন, উদ্ধার তৎপরতায় স্বাভাবিকভাবে আমাদের অনেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। লাইফগার্ডদের জরুরিভাবে কিছু দ্রুতযান দিলে সেটা উদ্ধারকাজে সহায়ক হয়। ইক্যুইপমেন্ট বৃদ্ধি হলে পর্যটকের মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
'সী সেইফ লাইফগার্ড'-এর ফিল্ড টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, কক্সবাজার সৈকতে একটি মেডিকেল সাবসেন্টার দরকার, যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে। পানিতে ডোবা কেউ উদ্ধার হলে যাতে যথাযথ সেবাটা তাকে দেয়া যায়।

কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব রায়হান উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের চাহিদাগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, আমাদের আরও কর্মী নিয়োগ এবং আরও আধুনিকায়ন করা দরকার। এই বিষয়গুলো কমিটির মাধ্যমে করার চেষ্টা করছি আমরা।
উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে গত ৫ বছরে সাগরে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা থাকলেও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা সংকট ও পরিকল্পনার অভাবে এ শিল্প গতি পাচ্ছে না।
-B