ঢাকাঃ বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পকলা জাদুঘর এবং ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা বিখ্যাত ল্যুভ জাদুঘরে দিনে-দুপুরে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, রবিবার (১৯ অক্টোবর) জাদুঘর খোলার কিছুক্ষণ আগে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩০ থেকে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর জাদুঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চোর ধরতে তদন্তে নেমেছে দেশটির পুলিশ।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম জানায়, তিন মুখোশধারী ব্যক্তি সেইন নদীসংলগ্ন অংশ দিয়ে আসে। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য তারা একটি ধাতব মই ব্যবহার করে। পরে তারা ছোট বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে জানালার গ্রিল কেটে জাদুঘরের অ্যাপোলো গ্যালারিতে ঢুকে ৯টি মহামূল্যবান অলংকারসামগ্রী নিয়ে মোটর- স্কুটারে করে পালিয়ে যায়।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ নুনেজ বলেছেন, মাত্র ৭ মিনিটে এই চুরির ঘটনা সম্পন্ন হয়েছে। চোরেরা খুব দ্রুত প্রদর্শনী কেস থেকে অলংকারগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।
চুরি যাওয়া অলংকারের একটি অংশ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি জায়গায় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী রাশিদা দাতি।
ফরাসি টিভি চ্যানেল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়ার সময় চোরেরা সম্ভবত এটি ফেলে গেছে। টুকরোটি কোন অলংকারের অংশ সেটি যাচাই করা হচ্ছে। চোরেরা কোনো হিংস্রতা বা আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়াই পেশাদারিত্বের সঙ্গে এই কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।
অ্যাপোলো গ্যালারিতে যা রয়েছে : চোরেরা ল্যুভে’র যে গ্যালারিকে টার্গেট করেছে, সেই অ্যাপোলো গ্যালারিতে ফরাসি রাজমুকুটের অবশিষ্টাংশগুলোকে রাখা হয়। ফরাসি বিপ্লবের পর বেশিরভাগ অলংকার হারিয়ে গেছে বা বিক্রি হয়ে গেছে, তবে কিছু মূল্যবান জিনিস আজও সংরক্ষিত আছে। যেমন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, তার ভাতিজা তৃতীয় নেপোলিয়ন এবং তাদের স্ত্রীদের অলংকার।
ল্যুভের ওয়েবসাইট অনুসারে, অ্যাপোলো গ্যালারিতে সবচেয়ে মূল্যবান তিনটি হীরা রেজাঁ, সাঁসি, অরতেন্সিয়া রাখা ছিল। তবে এগুলোর কোনোটি খোয়া গেছে কি না, এখনো জানা যায়নি। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই অলংকারগুলোর বাণিজ্যিক মূল্য ছাড়াও ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।
অতীতে যত চুরির ঘটনা
অতি সুরক্ষিত ল্যুভে’র চুরির ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ১৯১১ সালে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত ‘মোনালিসা’ চিত্রকর্মটি এই জাদুঘর থেকে চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় সে সময় কবি গিয়োম আপোয়িনেয়ার ও চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। তবে চোর ছিলেন একজন ইতালীয়, যিনি জাতীয়তাবাদে আকৃষ্ট হয়ে ছবিটিকে ইতালিতে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তিন বছর পর ছবিটি ফ্লোরেন্স থেকে উদ্ধার হয়ে আবার ল্যুভে ফিরে আসে।
১৯৮৩ সালেও জাদুঘরটি থেকে ১৬ শতকের কিছু বর্ম চুরি হয়েছিল, যা ২০১১ সালে পুনরায় পাওয়া যায়। ১৯৯৮ সালে ১৯ শতকের চিত্রশিল্পী ক্যামিল কোরোর চিত্রকর্ম ‘লো শেম্যাঁ দ্য সেভর’ চুরি হয়েছিল, যা আজও পাওয়া যায়নি।
-B